চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যথানাশক ট্যাবলেটে মরণনেশা, আসছে ভারত থেকে

‘দামে কম, নেশা চরম’

লাইভ রিপোর্ট
১৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৩ অপরাহ্ণ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যথানাশক ট্যাবলেটে মরণনেশা, আসছে ভারত থেকে

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যথানাশক ট্যাবলেটকে মাদক হিসেবে গ্রহণের প্রবণতা বাড়ছে। এসব ট্যাবলেট পাচার হয়ে আসছে ভারত থেকে। আটদিনের ব্যবধানে জেলার সীমান্তে ব্যথানাশক ট্যাবলেটের দুটি চালান জব্দের পর এমন দাবি করেছে বিজিবি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক আগে থেকে ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয় ব্যথানাশক ট্যাবলেট। মাদকাসক্তদের কেউ কেউ এসব ট্যাবলেটের নাম দিয়েছে ‘গরীবের ইয়াবা’। ব্যথানাশক ট্যাবলেটকে মাদক হিসেবে গ্রহণকারীদের মধ্যে একটি কথাও প্রচলিত আছে ‘দামে কম, নেশা চরম’। কারণ ইয়াবার চেয়ে  কম দামে পাওয়া এসব ট্যাবলেটেই নেশা মেটাচ্ছেন তারা। 

আজ বুধবার সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী গোপালপুর থেকে ৪ হাজার ৭০০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট জব্দ করে বিজিবি। তবে এ ঘটনায় কেউ আটক হয়নি।

বিজিবি জানায়, সকাল ৭টার দিকে মনাকষা ইউনিয়নের গোপালপুরে গোপন খবরের ভিত্তিতে অভিযান চালায় বিজিবির ৫৩ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। এ সময় সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে একটি মোটরসাইকেলে আসতে দেখে থামার সংকেত দেন তারা।  দেওয়া হয়। এ সময় তারা মোটরসাইকেল ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরে টহলদল মোটরসাইকেলে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করে ৪ হাজার ৭০০ পিস ট্যাবলেট জব্দ করে।

এর আগে গত ১১ নভেম্বর শিবগঞ্জ উপজেলারি ঊনিশবিঘী সীমান্ত এলাকা থেকে ৩ হাজার ৬০০ ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট জব্দ করে ৫৯ বিজিবির সদস্যরা। 

৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মুস্তাফিজুর রহমান দাবি করেন, ‘ট্যাপেন্টাডল মূলত ব্যথানাশক ট্যাবলেট হলেও বর্তমানে তা ব্যাপকভাবে নেশাকারক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জেও এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে চোরাচালান ও সবরকম অবৈধ কার্যক্রম কঠোরভাবে দমন করা হবে।’

ট্যাপেন্টাডল ওষুধ মাদকদ্রব্য

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ট্যাপেন্টাডল ওষুধকে ২০২০ সালে মাদকদ্রব্য হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। মাদকসেবীরা ওই জাতীয় ওষুধকে মাদকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করায় একে ‘খ’ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের তফসিলে যুক্ত করা হয়। ২০২০ সালে ৮ জুলাই গেজেট প্রকাশ করে সরকার। এতে বলা হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রস্তাব মতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সুপারিশের ভিত্তিতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৬৫ ধারা অনুযায়ী ওই আইনে খ শ্রেণির মাদকদ্রব্য হিসেবে ট্যাপেন্টাডলকে তফসিল ভুক্ত করা হলো।

ট্যাপেন্টাডলকে মাদকদ্রব্য হিসেবে ঘোষণা করার পর এসব ট্যাবলেট উৎপাদন না করতে কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী, এ আইনের তফসিলে উল্লিখিত কোনো দ্রব্য বা মাদকদ্রব্যের সঙ্গে অন্য যে কোনো দ্রব্য একীভূত, মিশ্রিত কিংবা দ্রবীভূত থাকলে সেসব দ্রব্যকেও মাদকদ্রব্য হিসেবে গণ্য করা হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ভারত থেকে চোরাইপথে আসা শুরু হয়  ট্যাপেন্টাডল।

 

দামে কম, নেশা চরম

ইয়াবার চেয়ে অনেক কম দামে পাওয়া যায় ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট। যে কারণে এ ট্যাবলেটকে ‘গরীবের ইয়াবা’ বলে সেবনকারীরা।  মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, মাদকসেবীদের আটকের পর তারা শুনেছেন ব্যথানাশক ট্যাবলেট দিয়ে ‘চরম’ নেশা হয় তাদের। তাই মজা করে তারা ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেটকে বলেন ‘দামে কম, নেশা চরম’। 

ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সহকারী লাইসেন্সিং অফিসার জে. এম. নাহিদ নাহিয়ান বলেন, ট্যাপেন্টাডল উৎপাদন বন্ধের পর ফার্মেসীতে পাওয়া যায় না। তিনি বলেন, এসব ওষুধ ওভারডোজ নেয়ার ফলে নেশা হয় এ তথ্য আছে ঔষুধ প্রশাসনের কাছে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসান বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে নেশার প্রবণতা অনেক বেড়েছে এটা সত্য। দেশে উৎপাদন না হওয়ায় পাচার হয়ে আসছে এসব ট্যাবলেট। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও বিভিন্ন সময় জব্দ করেছে এ সব ট্যাবলেট। 

 

Read more — স্থানীয়
← Home